আমরা এর আগে জেনেছি, নেটওয়ার্ক কি ? কেন নেটওয়ার্কিং করা হয় ? এর মাধ্যমে আমরা কি কি সুবিধা পেতে পারি ? এবং নেটওয়ার্কিং এর জন্য কি কি জিনিসের প্রয়োজন হয় এসব বিষয় সর্ম্পকে হালকা একটু ধারণা পেয়েছিলাম। এবার আমরা নেটওয়ার্ক এর প্রকারভেদ সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ্ ।
ব্যবহারকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কের উৎপত্তি হয়েছে। নিন্মে এগুলি সম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
মালিকানার ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-
- প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network)
- পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network)
প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network): আইপি অ্যাড্রেসিং আর্কিটেকচারে অনুসারে ঐ সকল নেটওয়ার্ককে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলা হয় যেখানে প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস স্পেস ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়। IPv4 এবং IPv6 specifications প্রাইভেট আইপি রেঞ্জ নির্ধারণ করে । আবাসিক এবং অফিসে সাধারণত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ককে এই সকল রেঞ্জ এর আইপি অ্যড্রেস ব্যবহার করা হয়। এই নেটওয়ার্ককে চাইলেই যে কেউ অ্যক্সেস করতে পারে না ।
পাবলিক নেটওয়ার্ক(Public Network): পাবলিক নেটওয়ার্ক হল একটি সার্বজনিন নেটওয়ার্ক । যে কেউ এই নেটওয়ার্ক অ্যক্সেস করতে পারে । এ সকল নেটওয়ার্ক IPv4 এবং IPv6 specifications এর পাবলিক আইপি অ্যড্যেস দ্বারা গঠিত করা হয়। যার ফলে ইন্টারনেটে সংযুক্ত যে কেউ এই নেটওয়ার্ক অ্যক্সেস করতে পারে। এ সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য কিছূ নিয়ম নীতি নির্ধারণ করা থাকে । তবে যেহেতু এটি একটি সর্বজনিন নেটওয়ার্ক তাই এখানে ব্যবহারকারির তথ্যের নিরাপত্তার ঝুকি থাকে ।
কার্যাবলির ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-
- পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Per-to-Per Network)
- ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক(Client Server Network)
পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Per-to-Per Network): ঐ সকল নেটওয়ার্ককে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক বলে যে নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটার রিসোর্স শেয়ারের ক্ষেত্রে সমান ভুমিকা পালন করে । এখানে কোন ডেডিকেটেড সার্ভার থাকে না ফলে পিসি গুলোর মধ্যে গুরুতের দিক দিয়ে সবাই সমান। সব পিসিই ক্লায়েন্ট/সার্ভার হিসেবে কাজ করে। পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক সাধারনত ৫/১০ টা পিসির একটা নেটওয়ার্ক যেখানে মূলত ফাইল/প্রিন্টার শেয়ার, ইন্টারনেট শেয়ার, নেটওয়ার্ক গেম খেলা বা এই ধরনের ছোটখাট কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network): ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক এর মধ্যমনি হচ্ছে এক বা একাধিক সার্ভার। এই সার্ভার কম্পিউটার ক্লায়েন্ট পিসির জন্য প্রয়োজনীয় সকল সার্ভিস প্রদান করে।সার্ভিস সমূহের মধ্যে প্রধান গুলো হচ্ছেঃ ফাইল, প্রিন্ট মেসেজ, ডেটাবেজ, এপ্লিকেশন ইত্যাদি।
কার্যক্ষেত্রের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-
- লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক(Local Area Network)
- মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network)
- ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network)
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network) : লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক(Local Area Network) ,একে সংক্ষেপে ল্যান (LAN) বলা হয় । একই বিল্ডিং এর মাঝে কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে বলা হয় লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক । এই ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন খুব সহজ , এর্ং এর জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস সমুহের দাম খুব কম । এই ধরনের নেটওযার্কে ব্যবহৃত ডিভাইস সমুহ হল হাব, সুইচ , রিপিটার । আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN ই ব্যবহার করে থাকি। ছোট-মাঝারি অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে ডিভাইসসমূহের পরস্পরের মধ্যে তথ্য এবং রিসোর্স শেয়ার করা। তবে সাধারন ভাবে ল্যান বলতে এটা বলা যায় যে কিছু কম্পিউটার তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা যেখানে সংযুক্ত কম্পিউতার গুলোর ভেতর তারের মাধ্যমে ডাটা আদান-প্রদান সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে।
মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network): মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network)। একে সংক্ষেপে ম্যান (MAN) বলা হয় । একই শহরের মধ্যে অবস্থিত কয়েকটি ল্যানের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারফেসকে বলা হয় মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (MAN)। এ ধরনের নেটওয়ার্ক ৫০-৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই নেটওয়ার্কর ডাটা ট্রান্সফার স্পিড গিগাবিট পার সেকেন্ড। এ ধরনের নেটওয়ার্ক এ ব্যবহিত ডিভাইস গুলো হলো রাউটার, সুইজ, মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা ইত্যাদি।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network): ওয়াইড এরিয় নেটওয়ার্ক (Wide Area Network)। একে সংক্ষেপে ওয়্যান (WAN) বলা হয় । দূরবর্তী ল্যানসমূকে নিয়ে গড়ে উঠা নেটওয়ার্ককে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। (WAN)। সাধারণত দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে এই ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে । এ ধরনের নেটওয়ার্ক এর ডাটা ট্রান্সফার স্পীড ৫৬ কেবিপিএস থেকে ১.৫৪৪ এমবিপিএস। এ ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন বেশ জটিল এবং সাধারণত বিশাল ভৌগলিক এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এ ধরনের নেটওয়ার্কে ব্যবহিত ডিভাইসগুলো হলো রাউটার, মডেম, ওয়্যান সুইজ ইত্যাদি।
সুইচিং এর উপর ভিত্তি নেটওয়ার্ককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-
- সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্ক (Circuit switched Network)
- ম্যাসেজ সুইচ নেটওয়ার্ক (Message Switched Network)
- প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক (Packet Switch Network)
সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্ক (Circuit switched Network): সার্কিট স্যুইচিং একটি টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি যা দুটি ডিভাইস এর যোগাযোগের আগে দুটি নেটওয়ার্ক এর হোস্ট সমুহের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড কমিউনিকেশন চ্যানেল (সার্কিট) স্থাপন করে। সার্কিট স্যুইচিংয়ে, প্রকৃত ডাটা ট্রান্সমিশন শুরু হওয়ার আগে পথ নির্ধারণ করে । সার্কিট-সুইচড নেটওয়ার্কের ডিফারেন্সিং উদাহরণ হল প্রাথমিক এনালগ টেলিফোন নেটওয়ার্ক।
ম্যাসেজ সুইচ নেটওয়ার্ক (Message Switched Network) : ম্যাসেজ সুইচিং হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক সুইচ টেকনিক, ডাটাটি সম্পূর্ণরূপে সোর্স হোস্ট থেকে গন্তব্য হোস্ট এর দিকে সংরক্ষিত হয়। ডাটা রাউটিংয়ের সময় নেটওয়ার্কে প্রতিটি ইন্টারমিডিয়েট সুইচ পুরো ডাটাটিকে সংরক্ষণ করে। ডাটা পাঠানোর জন্য যদি পুরো নেটওয়ার্কটি যদি কার্যকর না হয় বা নেটওয়ার্কটি বন্ধ হয়ে যায়, ম্যাসেজ-সুইচ নেটওয়ার্ক ডাটা স্টোর করে এবং ডাটা কার্যকর করার জন্য যে কোন ধরনের মাধ্যম সুপ্রাপ্য না হওয়া পর্যন্ত এই ডাটা প্রেরণ করতে বিলম্ব করে।
প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক (Packet Switch Network): একটি প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ক এমন এক ধরনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা ডাটাকে ছোট ছোট প্যাকেট আকারে টান্সমিট করে। প্রত্যেকটি ডাটার সাথে সোর্স এবং ডেস্টিনেশন এর অ্যড্রেস ধারণ করে থাকে। প্যাকেট সুইচড নেটওয়ার্ককে প্রতিটি ডাটাকে ছোট ছোট প্যাকেট আকারে ভাগ করে এবং প্যাকেটটিতে গন্তব্যের তথ্য ধারণকারী একটি শিরোনাম দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি প্যাকেটটি এই শিরোনাম ব্যবহার করে গন্তব্যস্থলের নেটওয়ার্কে প্রেরিত হয়। গন্তব্যস্থলে প্রাপ্ত পাকেটগুলি থেকে ডেটা একত্রিত করে মুল ডাটাতে রুপান্তরিত করে।
নির্মাণ কৌশলের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ককে ২ ভাগে ভাগ করা যায় : যথা:-
- পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Point to Point Network)
- ব্রডকাষ্ট বা মাল্টিপয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Broadcast or Multipoint Network)
পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Point to Point Network): পয়েন্টে টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক হল এমন একটি নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যাতে দুটি কম্পিউটার বা হোস্ট একে অপরের সাতে ডাইরেক্টলি কানেকটেড থাকে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক এর একটি উত্তম উদাহরণ হল দুটি ফোন এর মধ্যে কথোপকথোন । এখানে দুটি মোবাইল পয়েন্ট টু পয়েন্ট কানেকশনে থাকে।
ব্রডকাষ্ট বা মাল্টিপয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Broadcast or Multipoint Network): ব্রডকাস্ট বা মাল্টিকাস্ট নেটওয়ার্ক হল এমন একটি সিস্টেম যাতে একটি কম্পিউটার বা হোস্ট একসাথে অনেকগুলি কম্পিউটার বা হোস্ট এর সাথে কানেকটেড থাকে। কোন কম্পিউটার ডাটা শেয়ার করলে তা নেটওয়ার্কেক এর অনেক গুলি কম্পিউটার তা গ্রহন করতে পারে। আশাকরি, আপনাদের নেটওয়ার্ক এর প্রকারভেদ সর্ম্পকে অনেক ভাল ধারণা পেয়েছেন।
pls, visit my site,https://djtech57.blogspot.com
ReplyDeleteকম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?{What is a Computer Network?}
ReplyDeleteyour windows license expire সমস্যা সমাধান?
Decimal, Binary, Octal, Hexadecimal সংখ্যা রূপান্তর করতে পাইথন প্রোগ্রাম ?
সংখ্যাসূচক ডেটা টাইপ { Numeric Data Types In Python }
কনভার্টিং Numeric Datatypes এবং Find Type
পাইথন ভাষায় ডাটা টাইপ কি? {Data Types in Python}